আপনি কি এন্ড্রয়েড এর hidden cost সম্পর্কে জানেন? না জানলে এই পোষ্টটি দেখুন।

এন্ড্রয়েড হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত স্মার্ট ডিভাইস অপারেটিং সিস্টেম। এর ডেভলপার গুগল সফটওয়্যারটিকে বিনামূল্যে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এটি ওপেন সোর্স- অর্থাৎ একে আপনি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় কাস্টোমাইজ করে এন্ড্রয়েড ব্র্যান্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারজাত করতে পারবেন। আর এজন্যই বিভিন্ন অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার (ওইএম) কোম্পানি (যেমন স্যামসাং, সনি) তাদের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটে এন্ড্রয়েড ওএস ব্যবহার করে। মূল এন্ড্রয়েড সফটওয়্যারটির জন্য কোনো লাইসেন্স ফি চার্জ করেনা গুগল।

কিন্তু, তাই বলে ভাববেন না যে, নির্মাতা কোম্পানিগুলো এটি একদম ফ্রি’তে ব্যবহার করে। বাইরে থেকে এন্ড্রয়েডকে যতটা ফ্রি ও মুক্ত উৎসের শোনায় ভেতরে ভেতরে সফটওয়্যারটি ঠিক সেরকম না।

কোন ডিভাইসে এন্ড্রয়েড ওএস ব্যবহার করতে চাইলে তাতে এর অফিসিয়াল অ্যাপ্লিকেশন স্টোর ‘গুগল প্লে’ থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এন্ড্রয়েডের মূল আকর্ষন হচ্ছে প্ল্যাটফর্মটির অসংখ্য অ্যাপ। এগুলো গুগল প্লে থেকে ডাউনলোড করে নেয়াই সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ উপায়। আর এখানেই এন্ড্রয়েডের লুকায়িত ব্যয় বা ‘হিডেন কস্ট’ শুরু।

এন্ড্রয়েডের এই অফিসিয়াল সফটওয়্যার স্টোর ব্যবহার করার জন্য আপনার ডিভাইসে ‘গুগল প্লে’ অ্যাপ ইনস্টল করা থাকতে হবে যা বাই ডিফল্ট ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানিই সরবরাহ করে। কিন্তু যেকোনো কোম্পানি ইচ্ছে করলেই তাদের ডিভাইসে গুগল প্লে ইনস্টল করে দিতে পারেনা। এজন্য ডিভাইসটিকে গুগলের বিভিন্ন শর্তের সাথে সমর্থিত/কম্প্যাটিবল হতে হবে। এসব হ্যান্ডসেট গুগল প্লে’র সাথে কম্প্যাটিবল কিনা সেট প্রমাণ করার জন্য ওইএম কোম্পানিগুলো থার্ড পার্টি টেস্টিং ফার্মের সহায়তা নেয়। ডিভাইস নির্মাতারা (উদাহরণস্বরূপ স্যামসাং) তাদের সেট টেস্ট করে টেস্টিং কোম্পানির সার্টিফিকেট নিয়ে গুগলের নিকট সাবমিট করে তারপর সবকিছু ঠিক থাকলেই কেবল তাতে গুগল প্লে (ও অন্যান্য গুগল মোবাইল সার্ভিস) ব্যবহার করা যাবে।

এন্ড্রয়েডঃ ফ্রি হলেও বৈধভাবে এটি ব্যবহার করতে চাইলে খরচ আছে

জিমেইল, গুগল ম্যাপস, প্লে স্টোর এসকল অ্যাপ ব্যবহার করতে চাইলে এই সার্টিফিকেট থাকা বাঞ্ছনীয়। যদিও গুগল এসব অ্যাপ ফ্রি’তেই দেবে, কিন্তু সেই যে কম্প্যাটিবিলিট টেস্ট, সেটি অনেক ব্যয়বহুল।

দ্যা গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, গুগল মোবাইল সার্ভিস (জিএমএস) লাইসেন্স নেয়ার জন্য দরকারী সার্টিফিকেট পেতে কোনো কোনো কোম্পানির ছয় অংকের অর্থ খরচ করতে হয়। পত্রিকাটি আরও লিখছে, বিশ্বের শতাধিক ছোট-বড় মোবাইল ডিভাইস নির্মাতাদের এই টেস্টিংয়ের পেছনে ৪০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে। এক্ষেত্রে ৩০,০০০ ডিভাইসের জন্য ৪০,০০০ ডলার এবং ১০০,০০০ ডিভাইসের জন্য ৭৫,০০০ ডলার খরচ হতে পারে বলে জানা যায়। তবে জিএমএস লাইসেন্সিংয়ের এই খরচের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি গুগল।

গুগলের অনুমতি ছাড়া ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি যদি জিমেইল, ম্যাপস বা প্লে স্টোর সরবরাহ করে তবে সেটা বেআইনি বলে গন্য হবে। অবশ্য, ব্যবহারকারী চাইলে বৈধভাবেই এগুলো ডাউনলোড ও ইনস্টল করে নিতে পারেন। কিন্তু এন্ড্রয়েড ডিভাইসে গুগল প্লে প্রিইনস্টলড না থাকলে সেটি এর বিক্রির জন্য খুবই নেতিবাচক ইঙ্গিত বহন করায় ওইএম কোম্পানি বাধ্য হয়েই লাইসেন্স নিয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু বেনামী ম্যানুফ্যাকচারার যে গুগলের অগোচরে লাইসেন্স ছাড়াই প্লে স্টোর দিচ্ছেনা তা কিন্তু নয়!

এন্ড্রয়েডের লাইসেন্স ফি ‘ফ্রি’ হলেও গুগল এর বিভিন্ন অ্যাপে প্রদর্শিত অ্যাড থেকে ভালই টাকা আয় করে নিচ্ছে। ওদিকে ওএসটিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন পেটেন্টের মূল্য দিচ্ছে ডিভাইস নির্মাতারা।

ফ্রি ও ওপেন সোর্স বলে এন্ড্রয়েডে ব্যবহৃত বেশ কিছু থার্ড পার্টি পেটেন্টের জন্য কোনো পয়সা খরচ করছেনা গুগল। তবে অপারেটিং সিস্টেমটির ব্যবহারকারী ওইএম কোম্পানিগুলো এসব পেটেন্টের লাইসেন্স ফি পরিশোধ করে থাকে। আপনি হয়ত জানেন, এন্ড্রয়েডে ব্যবহৃত পেটেন্ট লাইসেন্সিং ফি বাবদ স্যামসাং, সনি, এইচটিসি প্রভৃতি ফার্ম থেকে প্রতি বছর মোটা অংকের অর্থ পাচ্ছে মাইক্রোসফট!

একথা সত্যি, আপনি এন্ড্রয়েডকে যতটা ‘ফ্রি’ ভাবতে পারেন, আসলে এটি ততটা ‘ফ্রি’ নয়। তারপরেও… মোবাইল কম্পিউটিংয়ের জগতে গুগল এন্ড্রয়েডের অবদান অনস্বীকার্য। এন্ড্রয়েড আছে বলেই আইফোন-আইপ্যাডের যুগে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্মার্ট ডিভাইসের ছোঁয়া লেগেছে যা আইওএস নিয়ে কল্পনা করাও কঠিন। তবুও, গুগলের মত জায়ান্ট কোম্পানির কাছ থেকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি একটু মানবতা তো আশা করাই যায়!

Comments

Popular posts from this blog

এইচটিএমএল এর সকল ট্যাগ এর তালিকা। সংগ্রহে রাখুন অবশ্যই কাজে লাগবে।

অবসর সময় মজা করে কাটাতে আপনাদের জন্য নিয়ে আসলাম মজার কিছু ওয়েবসাইট।

ওয়েবসাইট তৈরীরর আগে যে বিষয়গুলো আপনার জানা দরকার।