এই পোস্টে আমরা মেধাস্বত্বের সাথে সম্পর্কিত তিনটি ‘টার্ম’ বা পরিভাষা/শব্দের মানে নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি পুরো পোস্টটি পড়ার পরে আমরা সহজেই এদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারব। টার্ম তিনটি হচ্ছে ‘পেটেন্ট’, ‘কপিরাইট’ ও ‘ট্রেডমার্ক’। চলুন শুরু করি।
১. পেটেন্ট
‘পেটেন্ট’ হচ্ছে কিছু স্বতন্ত্র বা একচেটিয়া অধিকার যেগুলো আইনগত সিদ্ধ কর্তৃপক্ষ দ্বারা কোনো উদ্ভাবককে তার উদ্ভাবনের জন্য প্রদান করা হয়। একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য পেটেন্ট দেয়া হয় যা পরে নবায়ন করা যায়। পেটেন্টকৃত উদ্ভাবনের কৌশল সংশ্লিষ্ট আইনী দপ্তরের মাধ্যমে সবাই জানতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম টেলিভিশনের পেটেন্ট নিয়েছিলেন জার্মান বিজ্ঞানী পল গটলায়েব নিপকো।
২. কপিরাইট
কপিরাইট বা মেধাসত্ত্ব হলো কোন একটি বিশেষ ধারণার প্রকাশ বা তথ্য ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষ কিছু অধিকারের সমষ্টিগত নাম।
সাধারণত একটি সীমিত সময়ের জন্য কপিরাইট কার্যকর হয়। ঐ মেয়াদের পর কাজটি ‘পাবলিক ডোমেইনের’ অন্তর্গত হয়ে যায়। সৃষ্টিশীল, বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা শিল্পের বিভিন্ন প্রকার কাজের জন্য মেধাস্বত্ব হওয়া সম্ভব। কবিতা, গল্প, গান ও অন্যান্য শিল্পকর্মের জন্য কপিরাইট প্রযোজ্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, ‘মিকিমাউস’ এর নকশা ডিজনির কপিরাইটেড প্রোপার্টি।
৩. ট্রেডমার্ক
ট্রেডমার্ক বা ব্যবসা স্বত্ত্ব হল একটি চিহ্ন বা প্রতীক যা দ্বারা একটি প্রতিষ্ঠান বা উৎস থেকে আগত পণ্য বা সেবা থেকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা উৎসের পণ্য বা সেবা পৃথক করা যায়। সাধারণত, পণ্যের মোড়কের গায়ে বা অন্যান্য কাগজপত্রে ট্রেডমার্ক অঙ্কিত থাকে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্থাপনায় এটি দেখা যায়। ট্রেডমার্ক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেয়া হয় যা নবায়নযোগ্য। ট্রেডমার্ক প্রকাশ করার জন্য সাধারণত নিম্নের প্রতীকগুলো ব্যবহার করা হয়ঃ
- ® একটি বৃত্তের মাঝে R যার অর্থ হল এটি যথাযথ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা অনুমোদিত ও নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক।
- ™ ইংরেজি অক্ষর TM বা ‘Trade Mark’ হল অনিবন্ধিত (রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি এমন) ট্রেডমার্কের প্রতীক। এটি কোন পণ্য বা ব্র্যান্ডকে মানুষের সাথে পরিচিত করানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
- ℠ ইংরেজি অক্ষর SM বা ‘Service Mark’ এটিও কোন পণ্য বা ব্র্যান্ডকে মানুষের সাথে পরিচিত করানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। সার্ভিস মার্ক নিবন্ধিত হয়ে গেলে সেটিকে ® চিহ্নের সাহায্যে প্রকাশ করা যেতে পারে।
ট্রেডমার্ক সাধারণত একটি ছবি, বর্ন, অক্ষর অথবা প্রতীক হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, উইন্ডোজ লোগো মার্কিন সফটওয়্যার নির্মাতা মাইক্রোসফটের রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক।
সাধারণ উদাহরণ
একটি ‘রান্নার বই’ কিংবা ‘রেসিপি বুক’ এর কথা চিন্তা করুন। এতে বিভিন্ন খাবারের রন্ধন/প্রস্তুত প্রণালী বর্ণনা করা থাকে। এই রান্নার বইটি কোনো এক প্রকাশনী কিংবা রচয়িতার নামে কপিরাইট করা থাকতে পারে। ফলে ঐ কপিরাইট মালিকের অনুমতি ব্যতীত এর পুনঃমুদ্রণ, পরিমার্জন বা সম্পাদনা করলে মালিক তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারেন। এটা হচ্ছে কপিরাইটের তাৎপর্য।
অপরদিকে, ঐ রান্নার বইয়ের যেসব খাবারের প্রস্তুত প্রণালী দেয়া আছে সেই কৌশলগুলো এই কপিরাইটের অধীনে সংরক্ষিত নাও থাকতে পারে। অর্থাৎ, ঐ বইতে যদি ডিম ভাজার কৌশল দেয়া থাকে, তাহলে একই ডিম ভাজার কৌশল আপনি আপনার বইতেও নিজের মত করে লিখে দিতে পারবেন। কেননা, ডিম ভাজার সাধারণ কৌশল কারও পেটেন্ট করা নেই। মূল কথা হচ্ছে, অন্য কারো রেসিপি বই থেকে সরাসরি কপি-পেস্ট না হলেই আপনি আর কপিরাইট সঙ্ক্রান্ত ঝামেলায় পড়বেন না। পেটেন্ট মূলত উদ্ভাবনী কৌশল নিয়ে কাজ করে। আর ট্রেডমার্ক হচ্ছে ব্যবসায়িক পরিচিতির জন্য ব্যবহৃত চিহ্ন বা প্রতীক।
0 coment rios: