পারফিউম এর বর্ণিল ইতিহাস
ভারতবর্ষের সুগন্ধির ইতিহাসও খুব পুরনো। হিন্দু আয়োর্বেদিক গ্রন্থ চক্র সংহিতায় রয়েছে আতর-এর উল্লেখ। খ্রিস্টজন্মের সাতশত বছর পূর্বের ‘হর্ষচরিতা’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে সুগন্ধযুক্তকাঠের তেলের।
প্রাচীন পারস্যেও সুগন্ধির ব্যবহার ছিলো। সুগন্ধি ছিলো আভিজাত্য ও মর্যাদার প্রতীক। আর গ্রীসে প্রথম সুগন্ধির ব্যবহার শুরু করেন আলেকজান্ডার। জানা যায় আলেকজান্ডার সম্রাট তৃতীয় দারিয়ুসকে পরাজিত করে শিখে নিয়ে যান সুগন্ধি তৈরির কৌশল। সেই গ্রিস থেকেই ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে।
আরবে সুগন্ধির ব্যবহার ছিলো আগে থেকেই। তবে আরব্য চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী ইবনে সিনা সর্বপ্রথম গোলাপ ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধি বের করেন। সেই থেকে আরবীয়রা সুগন্ধি শিল্পে বেশ সমৃদ্ধি লাভ করে। আরবদের পারফিউম ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিলো তার প্রমাণ পাওয়া যায় শেক্সপিয়রের বিখ্যাত নাটক লেডি ম্যাকবেথের কণ্ঠের ‘The Perfume of Arabia’।
প্রাকৃতিক উপায়ে পাতনের মাধ্যমে আগে সুগন্ধি তৈরি করা হতো। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে সূচিত হয় কৃত্রিম সুগন্ধির। রসায়নবিদ্যার প্রসারে উৎপন্ন হয় এ্যারোমেটিক যৌগ। আর তৈরি হতে থাকে নানা সুরভীযুক্ত রাসায়ানিক পদার্থ।
সবচেয়ে ভালো পারফিউম কোথায় পাওয়া যায়? প্রশ্ন করার সাথে সাথে নিশ্চত ভাবে উত্তর করবেন। ফ্রান্স। হ্যাঁ, ফরাসীরাই এখন পারফিউম শিল্পে শীর্ষে। দুশো বছর আগে ফ্রান্সের দক্ষিন প্রভিন্সে ছিল ট্যানারি শিল্প। চামড়া পচা গন্ধে সেখানে টেকা ছিলো কঠিন। সেই দুর্গন্ধ দূর করার জন্য চাষ করা হয় সুগন্ধি লতা গুল্ম। সেখান থেকেই শুরু হয় ফরাসীদের পারফিউম শিল্পের যাত্রা।
শুধু সুগন্ধিই না, আরো আরো উপকরণ লাগে পারফিউম তৈরি করতে। উদ্ভিদজাত উপাদান, প্রাণিজাত উপাদান ব্যবহার করা হয় পারফিউম তৈরি করতে। গোলাপ, লাইলাক, লিলি, ম্যগনোলিয়া প্রভৃতি ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধি যেমন তৈরি করা যায়। তেমনি হরিণের নাভীর চর্বি ছাড়াও স্পার্ম তিমির অ্যাম্বার্গিস, বিভার ও সিভেটের ব্যবহারও রয়েছে পারফিউম তৈরিতে। চন্দন, সিডার, ইউক্যালিপটাস গাছ থেকে পাওয়া যায় সুগন্ধি তৈরির উপকরণ। ধনে, এলাচী, দারুচিনি, তেজপাতা এরাও পারফিউম তৈরির উপাদান। আরো উপাদানের মাঝে আছে নানা ফল ও বৃক্ষের ছাল।
0 coment rios: